ইদাকে যতটুকু ভালোবাসি, সম্মান করি-ঠিক ততটুকুই ভালোবাসি, সম্মান করি-সাধনা দিদিকে। একটুও কম নয়।কি সুন্দর চেহারা সাধনাদির!
খুব উজ্জ্বল ফর্সা না- আবার কালোও না, মাঝামাঝি।
একহারা লম্বা গোছের। পটলচেরা চোখ। নাকটি একটু
লম্বা, ছুঁচালো। চুলের গোছা পিছন দিক দিয়ে হাঁটুর নিচে গিয়ে পড়েছে। মায়াভরা চাহুনী। এই মোহনীয়
কৌমকান্তি চেহারা আমাকে টানে -স্নেহের জন্যে, একটু
ভালোবাসার জন্যে।ভগবান এই লক্ষীদেবীকে স্বর্গ থেকে যেন মর্তে এনে ঠায় দিয়েছেন!
কদাচিৎ দেখা পেতাম সাধনাদির। নিমাইদা যখন
ক্লাস টেনে,সাধনাদি তখন ক্লাস এইটে।আর আমি তখন
প্রাইমারীতে ক্লাস থ্রি তে পড়ি।কড়া শাসনের বেড়াজালে আবদ্ধ ছিল সাধনা দিদিরা। বাড়ির বাহিরে আসা যখন- -তখন সম্ভব হতো না তাদের।
আমাদের পাড়ার বড় বাড়ি এ’টা। বাড়ির চারিপাশ
উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। পুবদিকে বাহির উঠানের সাথে
বড় একটা দরজা। প্রায় সবসময় দরজাটি বন্দ থাকতো। দক্ষিণে তাদের বড় একটা পুকুর। শানবাধা
ঘাট। সেখানে আর একটা ছোট দরজা।তা’ছাড়া এবাড়ি
ঢোকার আর কোন ফাকফোকর দেখিনি।
এ’বাড়ির বড় বাবুটির নাম -অমরেশ মজুমদার। ছোট বাবুটির নাম-কুমারেশ মজুমদার। দুই ভাইয়ে মিলে একান্নবর্তী পরিবার। চাকর-বাকর আর মাইনদার মিলে এ’বাড়ির সদস্য সংখ্যা সর্বসাকুল্য বারোচৌদ্দজন
মত হবে। চারিদিকে আভিজাত্য যেন গনগন করে! এই
বাড়িটি এবং এই বাড়ির লোকজন যেন আলাদা! পাড়ার অন্যদের সাথে খুব একটা সখ্যতা নেই।কেমন
যেন ছাড়াছাড়া ভাব!
বড় জ্যাঠা অমরেশ বাবু খুব রাশভারী গোছের। খুব
উঁচু,লম্বা এবং মোটা। ঠিক জমিদারের মত লাগে। আমরা ছোটরা খুব একটা এবাড়ির ধার ঘেসতাম না।
বাড়িটির পুর্ব পাশের প্রাচীর ঘেঁষে একপেয়ে একটা রাস্তা দক্ষিণ পাড়ায় চলে গেছে। আমি মাঝেমধ্যে এই
রাস্তা ধরে দক্ষিণ পাড়ায় যেতাম মামাবাড়িতে। ঠিক
এই জায়গা পার হতে গিয়ে গায়ের ভিতর একটা ছ্যাঁত
ছ্যাঁত ভাব আসতো। সেটা এই বাড়ির বড়বাবুটির জন্যে। আমরা ছোটরা খুব ভয় পেতাম বাবুটিকে এবং
সেইসাথে এই বাড়িটিকেও।