ঢাকাশনিবার, ২৫শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, দুপুর ১:১৬
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ট্রেনে উঠে জানালার পাশে সিটটা পেয়ে গিয়ে বসে_মোবাইলটা বেড় করে হেড ফোনটা

ESAHARA NEWS অনলাইন নিউজ পোটাল
ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৩ ৭:২৬ অপরাহ্ণ
পঠিত: 35 বার
Link Copied!

ট্রেনে উঠে জানালার পাশে সিটটা পেয়ে গিয়ে বসে_মোবাইলটা বেড় করে হেড ফোনটা কানে দিয়ে গান শুনছিলাম। আমার সামনের সিটে একজন বয়স্ক ভদ্রলোক বসেছিলেন। দুপুরের সময় ট্রেনের যাত্রী খুবই কম ছিল। হঠাৎ ট্রেনে টিটি টিকিট চেক করতে আসতে দেখে বয়স্ক ভদ্রলোকটি বেশ ভয় পেয়ে গেলেন। তার হাবভাব দেখে আমি জিজ্ঞেস করলাম_”টিকিট কি করা হয়নি আপনার.?”

ভদ্রলোকটি খুব শান্তস্বরে বললেন_”ট্রেন ষ্টেশনে ঢুকে যাওয়ায় টিকিট করার সময় পায়নি। আর আমার কাছে ফাইন দেওয়ার মত টাকাও নেই।” আমি তাকে অভয় দিয়ে বললাম_”চিন্তা করবেন না_ফাইনের টাকা আমি দিয়ে দেব।

আমার কথা শুনে দেখলাম_তিনি খুব আনন্দিত হলেন। কিন্তু টিটিকে দেখলাম কোন কারন বশতঃ আমাদের কাছে টিকিট চেক করতে না এসে হিজলি ষ্টেশনে নেমে পড়লেন।

যাই হোক আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম_”কোথায় যাবেন.?” বয়স্ক লোকটি যেন একটু ভাবনায় পড়ে গেলেন। তারপর বললেন_”হাওড়া যাব ভেবেছিলাম কিন্তু এবার ভাবছি বাকুড়া যাব। ”

তার কথা শুনে আমি একটু অবাক হলাম। তিনি বললেন_”জানো মা_আমার নাম বীরেন মন্ডল। আমি একটা কোম্পানিতে কাজ করতাম। দুই ছেলে আর এক মেয়ে রেখে আমার স্ত্রী মারা যায়। আর বিয়ে করিনি এই ভেবে যে_সতীন মা এসে আমার বাচ্চাদের উপর অত্যাচার করতে পারে। বাবা হয়েও আমি তাদের মায়ের মতো খুব আদর যত্ন দিয়ে বড় করেছিলাম। যা টাকা রোজগার করতাম ছেলে দু’টোর পড়াশোনার পেছনেই খরচ করে ফেলতাম। বড় ছেলে এখন স্কুল মাষ্টার আর ছোট ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। মেয়েটা আমার পড়াশোনায় অনেক ভালো ছিলো কিন্তু তিনজনের পড়াশোনায় খরচ চালাতে পারছিলাম না বলে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করিয়ে বিয়ে দিতে দিলাম। বড় ছেলে দাঁতনে থাকে আর ছোট ছেলে হাওড়াতে। ”

আমি বললাম_”তাহলে আপনি ছোট ছেলের কাছে যাবেন.? ” কথাটা শুনে তিনি খুব করুণ সুরে বললেন_”দুই ছেলে বিবাহিত_তাদের ছেলে মেয়ে নিয়ে থাকে। আমাকে তারা ভাগ করে নিয়েছে।”

আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম_”ভাগ করে নিয়েছে মানে। ”

তিনি বললেন_”মাসের পনের দিন বড় ছেলে আর পনের দিন ছোট ছেলের বাড়িতে থাকি। তারা ভাগ করে এই বৃদ্ধ বাবার প্রতি ছেলে হওয়ার দায়িত্ব পালন করছে। ছোট ছেলের বাড়িতে ছিলাম। শরীরটা খুব খারাপ ছিল কিন্তু পনেরদিন হয়ে গিয়েছিল। বউমাকে বললাম_একদিন পড়ে যাব কিন্তু বউমা শুনলো না। চলে যেতে বললো বড় ছেলের বাড়িতে_তা না হলে খাবার মিলবে না।”

“অসুস্থ শরীর নিয়ে আমি বড় ছেলের বাড়িতে এসে দেখি দরজায় তালা মারা। তারা জানে আমি আসব_তবুও কোথাও বেড়াতে চলে গিয়েছে পরিবার নিয়ে। আসলে তারা কেউ অসুস্থ বুড়োটার দেখভাল করার দায়িত্ব নিতে চায় না।”

কথাগুলো বলতে বলতে বীরেন বাবুর চোখ জল গড়িয়ে পড়ছিল। আমি তাকে শান্তনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না।

তিনি কাঁদতে কাঁদতে দুঃখ প্রকাশ করে বললেন_”ছেলে দু’টোর পরিবর্তে মেয়েটাকে যদি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতাম তাহলে খুব ভালো হতো। মেয়ে বাকুড়াতে থাকে। জামাইয়ের একটা ভূষিমালের দোকান আছে। আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। মেয়ে আমার অঙ্গনওয়ারীতে একটা কাজ করে। অনেক বার ডেকেছে_বাবা, তুমি আমাদের এখানে এসে থাকো। ছেলে থাকতে মেয়ের বাড়িতে গিয়ে থাকা সমাজ ভালো চোখে দেখে না। তবু মেয়ের বাড়িতেই যাবো ভাবছি। আমার কাছে ভালো খাওয়া দাওয়ার চাইতে_একটু ভালোবাসাই অনেক মূল্যবান।”

“মেয়ের কাছে গিয়ে তার কাছে ক্ষমা চাইব প্রথমে। তার ভাইদের পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য_তার পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়ে তার জীবনের স্বপ্নগুলো ধ্বংস করে দিয়েছি। তখন ভাবতাম_মেয়েরা তো বিয়ে হয়ে শ্বশুর বাড়ি চলে যাবে। বুড়ো বয়সে ছেলেরাই তো দেখভাল করবে। তাই মেয়েকে আর পড়ালাম না। তার স্বপ্নগুলো ধ্বংস করে দিয়েছিলাম।”

বীরেন বাবুর কথাগুলো শুনে খুব কষ্ট হচ্ছিল_মনে মনে বললাম_”বাবা-মা এর দায়িত্ব ছেলে-মেয়ে যতদিন না সমানভাবে বহন করতে শিখবে_ততদিন হয়তো সমাজ নিজেদের ছেলে-মেয়ের প্রতি বাবা-মা এর ধারনা বীরেন বাবুর মতই থাকবে ।

%d bloggers like this: