প্রশ্নঃ কেউ যদি ভগবানের সেবার জন্য অর্থ ভিক্ষা করে আনে, তারপর সেই অর্থ নিয়ে সে নিজের জন্য রেখে দেয়, ভগবৎ সেবার জন্য নিয়োগ না করে, তবে তার গতি কি?
#উত্তরঃ মনু সংহিতায়(১১/২৫) মহর্ষি মনু উল্লেখ করেছেন—
যজ্ঞার্থমর্থং ভিক্ষিত্বা যো ন সর্বং প্রযচ্ছতি।
সে যাতি ভাসতাং বিপ্ৰ কাকতাং বা শতং সমাঃ॥
“শ্রীভগবানের সেবার উদ্দেশ্যে অর্থ ভিক্ষা করে যদি ব্যক্তি সেই সব অর্থ ভগবৎ সেবায় নিয়োগ না করে, তবে সেই অপরাধে অর্থাৎ, তাকে পরজন্মে শত বৎসর অবধি বাজপক্ষী কিংবা কাক জীবন পেতে হবে। বিভিন্ন জনের উচ্ছিষ্ট, মলমূত্র ও পচা নোংরা ভক্ষণ করে জীবন যাপন করতে হবে।
আবার, কেউ কেউ শ্রীভগবানের সেবার উদ্দেশ্যে অর্থ ভিক্ষা করে কিঞ্চিৎ অর্থ ভগবানের সেবায় নিয়োগ করলো, বাকী অংশটি নিজের ভোগ তহবিলে নিয়োগ করলো। ভগবৎ সেবা বিনা যা সঞ্চিত করলো তাইই তার জীবনের দুঃখের মেয়াদ বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
বাস্তবিকই সবকিছুই শ্রীভগবানের সম্পদ। এই জ্ঞানে মানুষ তার যাবতীয় সম্পদ এমনকি দেহ মন বাক্য, গৃহ, পরিবার–সবকিছুই ভগবানের প্রীতি বিধানাথে যুক্ত করার জন্য প্রয়াসী হয়। তখন তিনি নিজে ভক্ত হন, পরিবার পরিজনকে ভক্তিজীবনে আনবার চেষ্টা করেন। লোকহিতকর কর্মেও যুক্ত হন। তখন তিনি সবকিছুই ভগবৎ সেবার উপকরণ রূপে দর্শন করতে থাকেন। তিনিই বস্তুর যথার্থ ব্যবহার করে থাকেন। পরিণামে তিনি শাশ্বত জীবন লাভ করেন, বৈকুণ্ঠ জগতে উপনীত হন।
কিন্তু যারা নিজের ভোগের জন্য, নিজের ইন্দ্রিয় তর্পণের জন্য সম্পদ সঞ্চয় করে থাকে, কিংবা ভবিষ্যতে কোনও ভূত-প্রেত তাঁর নাতিপুতি রূপে আসবে তাদের চিন্তা করে ধন সম্পদ নিছক সঞ্চয় করতে থাকেন, তার পরিণতি হিসাবে অন্য ইতর প্রাণীতে জন্ম নিয়ে কেবল উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় কালাতিপাত করতে হবে।
শতবর্ষ পত্রিকায় শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর উল্লেখ করেছিলেন, শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের সেবার জন্যে, তোমরা যাদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করছো, তা কেবলমাত্র শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণ সেবা বিকাশ সাধনের জন্য, তা না করে তোমরা যদি সেই অর্থ ভোগ করতেই থাকো তবে যারা তোমাদেরকে ভক্ত জ্ঞান করে অর্থ দিয়েছিল, তাদের ঘরে কুকুর বেড়াল বা গাধা হয়ে তাদের ঋণ পরিশোধ করে দিতে হবে।
শ্রীল গৌরকিশোর দাস বাবাজী মহারাজ বলেছিলেন, বাস্তবিকই যারা শ্রীশ্রীরাধামাধবের ভজন করেন, তাঁরা কেবলমাত্র ভজন-আনুকূল্যই গ্রহণ করে থাকেন। এছাড়া আর সমস্ত কিছু ব্যক্তিগত আয়োজন তা সবই এই জড় সংসারে ঘোর বন্ধনের কারণ।
ভক্ত ব্যক্তি শ্রীকৃষ্ণের সেবার জন্য, কৃষ্ণকৃপা লাভের জন্য আত্মনিয়োগ করে থাকেন। শঠ দুরাচারী ব্যক্তির আচরণ সমাজে অচিরেই জনচক্ষুর আয়ত্তাধীন হয়ে পড়ে। আর, আপনি কোথায় কখন কার সাথে কিরূপ আচরণ করছেন সেই সম্বন্ধে সর্বান্তর্যামী শ্রীকৃষ্ণ সবকিছুই জানেন। অহং সর্ব সাক্ষী—আমি সবই দেখছি। আমাদের গতি-প্রকৃতি তিনি দেখছেন।